বাস্তববাদী

কল্পনাটা খুবই সহজ, বাস্তবটা বড়ই কঠিন। তবু আমরা বাস্তববাদী।

বেকার বসে থাকা গ্রাজুয়েট ছাত্র মূর্খ বলে বিবেচিত, আর এইট পাস করা চাকরিওয়ালা বিশাল পন্ডিত। এটাই বাস্তব আর আমরা বাস্তববাদী।

সকালবেলা ধর্মনিরপেক্ষতার গান নিয়ে বাড়ি থেকে বেরই, আর সন্ধেবেলা ধর্ম নিয়ে চেঁচামেচি মারামারি করে  বাড়ি ফিরি। এটাই চিরন্তন বাস্তব আর আমরা বাস্তববাদী।

শৈশবকালে ভাইবোনদের একটু আঘাত লাগলে আমাদের নিজের গায়ে অনুভব করি আর বড়ো হলে কে কার কে। একজন অন্যজনের ভালো দেখলে গা জ্বলে। বিয়ের পর বাবা -মায়ের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে। এটাই তো এখন বর্তমান বাস্তব। আর আমরা সেই বাস্তব মেনে চলা বাস্তববাদী।

মেয়ের জন্য সরকারী চাকরি করা পাত্র খুজি। মেয়ে চাকরি করলে সেটা সমাজ বিরোধী। তাই আমরা সমাজ বাস্তবতা মেনে চলি। আমরা বাস্তববাদী।

বিদেশিদের থেকে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা পেলাম। আমরা স্বাধীন। তবু বাস্তবতা টাকে বজায় রেখেছি। শক্তিশালী সর্বদা দুর্বল কে শোষণ ও শাসন করবে। এখানে প্রতিভার কোনো দাম নেই। যে একবার উপরে উঠে গেছে তার বংশধররাই গদি ধরে বসে থাকবে। এটাই তো বাস্তবতার নিয়ম।আর আমরা বাস্তব বাদী।

অত্যাচারের বিরুধ্যে রুখে দাড়াই আমরা। অত্যাচারিকে সহানুভূতি জানাই। কিন্তু এসব করে কী  লাভ? আমাদের কি যায় আসে? তাই চুপ করে সরে যাই, কারণ  আমরা বাস্তববাদী।

নেশা, ধুমপান করতে বারণ করা ডাক্তার যখন পাসের বাথরুম থেকে সিগারেটের গন্ধ নিয়ে আসে, তখন চুপ করে বসে থেকে সেই গন্ধ নিই আর সেভাবেই অষূধের সাথে সিগারেট নিয়ে বাড়ি ফিরি। আমরাও ডাক্তারের মতো বাস্তববাদী। 

সমাজে কিছু যারা ভালবাসার নাম নিয়ে নংরামি করে, তাদের দেখে লজ্জায় আমরা উপেক্ষা করি। আবার যখন কেউ ধর্ষিত হয় তখন মুখ খুলে বলি “তার চরিত্র খারাপ ছিল এবং এটাই তার পরিণতি”। এটাই সত্য বাস্তবতা আর আমরা সেই বাস্তববাদী।

সমাজে যখন কোনো ধর্ষণ হয় তখন ওই ধর্ষিতার প্রতি কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ থাকে না। তার ন্যায় বিচার এর জন্য কেউ মুখ তুলেও তাকায় না। সে তখন চরিত্রহীন। কিন্তু কাউকে ধর্ষণের পর খুন করা হলে সবাই ধিক্কার জানায়। তখন সবার মুখে মুখে একটাই রব “Justice for her", আর বাকী মেয়েরা, তাদের দোষ কি??? তাদের কথা আমাদের কারো মাথায়ও আসে না। Statistics অনুজায়ী India তে প্রতি 15 মিনিট অন্তর একটা করে ধর্ষণ হয়। কিন্তু তাদের জন্য কোনো justice প্রয়োজন নেই, মারা গেলে তাদের আত্মার শান্তির জন্য justice চাই। এটাই বাস্তব আর আমরা সেই বাস্তববাদী।

সর্বদা আমরা পক্ষে বলি, সত্য হোক বা মিথ্যা। ন্যায় অন্যায় বিচার করা আমাদের কাজ নয়। সে তো উচ্চ ক্ষমতাবান ব্যাক্তিরা ঠিক করবে। কিছু বলতে গেলেই তো জেলে যেতে হবে। তাই বাস্তবতা কে মেনে কিছু না বলাই ভালো। আমরা তাই বাস্তববাদী।

পৃথিবীতে প্রাণের অনেক প্রাচুর্য, অনেক সবুজ গাছপালা, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। অত গুলো বাচিযে রেখে কি হবে। আমাদের নানা প্রয়োজনে তাদের আত্মবলিদান দিলেই বা ক্ষতি কি? তারাও আমাদের সাথে বাস্তব মেনে চলবে।

কে প্রাণে বাঁচে, আর কে মারা যায় তাতে আমাদের কী? দেশের সমস্ত গরিব-চাষি-শ্রমিক-সীমান্তবাসী মরুক বাচুক বা জাহান্নমে যাক, গণতন্ত্র বেঁচে থাকলেই হলো। আমরা গর্বিত আমরা গণতান্ত্রিক। আমরা স্বাধীন। পত্র পত্রিকা এবং মিডিয়ারা তো বাঁচিয়ে রেখেছে গণতন্ত্র কে। সে যাই হোক না দেশে। তাতে আমাদের কি, আমরা তো বাস্তববাদী। আমরা জীবনকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। 

আমরা অনেকবার বিপ্লব এনেছি ঠিকই কিন্তু তার সাথে বাস্তবতাটাকেও টিকিয়ে রেখেছি। আমরা চিরন্তন বাস্তববাদী আর এটাই বাস্তব।




Comments

Popular posts from this blog

Love ❤

মাঝপথ

Civilization